একটা ব্যাগ। তাতে কোনরকমের বাহ্যিক বিশেষত্ব নেই ।পুজো তে বাজার করতে গেলে ওরকম দু-একটা ব্যাগ সবারই জোটে। এই ব্যাগটা অবশ্য কোন পূজোয় পাওয়া টা আমি জানিনা, জানার কারণ ও উপস্থিত হয়নি কখনো; সুধু কিভাবে যেন ব্যাগটা রয়ে গেলো আমার সাথে। ব্যাগটা জুটের, খয়রই বাদামি রঙের, তাতে একসময় কোনও এক কাপড়ের দোকানের নাম সোচ্চারে ঘষিত ছিল, সময়ের সাথে শেই ঘোষণা ফিসফিসানিতে পরিবর্তিত হয়েছে। বাগটার মজবুত বাঁশ এর হ্যান্ডল ছিল, তাই এত সময়ের ভার নির্বিকার বহন করছে হয়ত।
ব্যাগটা আমি প্রথম নিয়ে যাই নরেন্দ্রপুরে যাবার সময় - প্রথম বাড়ি থেকে বাইরে যাত্রা, ঠিক বুঝতে পারিনি সেই যাত্রা অগস্ত্যযাত্রায় বদলে যাবে ভাগ্যের যাঁতাকলে পড়ে। সেইসময় এই ব্যাগ টাতে ছিল কিছু হাঙ্গার, রঙবেরঙের আর একটা স্টিল এর গ্লাস। আমাদের গ্লাস ও থালায় রেজিস্ট্রেশান নম্বর খোদানো থাকত, জাতে একজনের জিনিশ অন্যজনের কাছে ছলে গেলেও তা ফেরত পাওয়া যায়; মহৎ উদ্দেশ্যের বেশিরভাগ উদ্যোগের মতই এটাও বিশেষ কাজ দিত না, তবে তা এক অন্য গল্প।
আমি যখন অন্য "বোর্ড" এর পড়ার চাপ এ হাঁসফাঁস করছি, আমার সেই কখানা হাঙ্গার আমার কাপড়ের বিপুল ভারে হাঁসফাঁস করতে লাগল এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাজে ইস্তফা দিল। গেলাসখানাও খওয়া গেলো। আমার যদিও জল খাওয়ার কোনদিন অসুবিধে হয়নি, নরেন্দ্রপুর সৌহার্দের মুক্তপ্রাঙ্গন ছিল- হাত বাড়ালেই পাওয়া যেত যা চাই, তাই গ্লাস আমার ছিল, শুধু সেটা আমার "কয়েদি" নম্বর এর নয়, অন্য কোনও সেল এর অন্য কোনও আসামীর। কিন্তু বস্তুর মূল্য তার ব্যাবহারে, যে জল আমি খাচ্ছি, সে জল ঠাকুর ও খেতেন। অতএব দিন কাটতে লাগল। নরেন্দ্রপুরের শেষের দিকে যখন মাধ্যমিক পাস করে বাড়ি আসব দেখা গেলো থেসিউস এর জাহাজের মত আমার সব খোলনলচে পালটে গেছে, যদিও বাইরের আমি তা এক আছে- পড়ে জেনেছিলুম ওটাকে "বড়ো হওয়া" বলে। একটা জিনিস কিন্তু পাল্টায়নি, বা বলা ভাল, হারায়নি - আমার চটের ব্যাগটা।
যখন বাড়ি ছলে আসছি, সেই ব্যাগ এ আমার দেওয়া কয়েকটা পরীক্ষার সার্টিফিকেট আর একটা কেমিস্ট্রির টেক্সট বই ছিল।
এরপরের দুই বছর একইসাথে আমার জীবনের উত্থান ও পতনের কারন। অবাধ স্বাধীনতার ঢেউ এ ভাসতে লাগলাম। নেশা না করেই আশপাশের সব কিছু রঙ্গিন লাগতে আরম্ভ করল। জীবনে সুখ দুঃখ ব্যাথা বেদনা পাওয়ার অনেক রাস্তা আমার জানা ছিল, এই অত বর একখান প্রকাণ্ড রাজপথ যে আমার বাকি ছিল ঘোরা তা জানতুম না; তাও ঘোরা হয়ে গেলো- প্রেম এ পড়লুম, আবার উঠেও পড়লুম সেখান থেকে, তবে সেসব আজ থাক। গল্প হল এইসব করতে গিয়ে সমাজসচেতন একমাত্র যে জীবিকা বাঙ্গালির মনে গাঁথা, সেই ডাক্তারি আমার আর করা হল না। পরীক্ষায় ভরাডুবি। অতঃপর অধিক স্বাধীনতা উপভোগের দায়ে আমার নির্বাসন হল।
জলের মাছ জলে ফিরে এলুম। এই দু বছর সময়ের ঝরে তাল দিতে গিয়ে আমার সতের বছরের একনিষ্ঠ সঙ্গীটিকে ভুলেই গেছিলুম- মানুষ যেমন বেইমান হয় আরকি, কিন্তু দেখলুম সে আমাকে ভোলেনি।
বিদ্যামান্দিরে যাবার সময় ও সেই ব্যাগ দেখতে পেলুম; মনে মনে হাসলাম, ব্যাগ ও হাসল বোধয়। তাতে ছিল একটা ছাতা, আর একটা মাইক্রোবায়োলজির বই। বিদ্যামান্দির আমার জীবনের ফুটবল টাকে এক শট মেরে আবার অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলে। কত অজানা জানলুম, মনের মত দু তিনটে বন্ধু জুটে গেলো। বেশ ভাল কাটতে লাগল সময় টা। তাও ৩ বছর দেখতে দেখতেই কেটে গেলো। ভিতরে থাকতেই পরের ঠিকানা জেনে গেছিলুম- বাঙ্গালর।
অশ্বার সময় কোনও কিছু ভেবে আমি ব্যাগ গছাইনি, কিন্তু চটের ব্যাগটা সুধু এখনো হারাইনি বা ছিরে যায়নি দেখে অবাক হয়েছিলুম। ব্রিধহ বয়েসে সেটা ধুঁকছে, কিন্তু বেছে আছে। বেশি কিছু নিলে ছিঁড়ে পড়তে পারে এই ভেব কয়েকটা বই ঢুকিয়ে নিয়েছিলুম। পড়ে বের করতে গিয়ে দেখই জুজুতসানন্দের একটা উপনিষদ, একটা গীতা, আর দস্তভস্কীর "নোট্স ফ্রম থে আন্ডারগ্রউন্ড" বইটা ছিল। বড় অদ্ভুত লেগেছিল, আমার যবনের ফুটবল ম্যাচের সে যেন ধারাভাষ্যকার, খুব ঘুরিয়ে কথা বলে, তনে কাটে, কিন্তু তার বিবরনের যুক্তি বড় ধারাল, বড় অকাট্য।
বাঙ্গালরে আশার সময় ব্যাগটাকে আর নিয়ে আসিনি, ওটা যেরকম ভাবে আমার জীবন টাকে দেখছিল, কিছুটা অস্বস্তি হছহিল বোধয়, কোথাও, আমার অবচেতনের কোনও এক স্তরে। তাই ওটা অখন যেখান থেকে আমার সঙ্গ নেওয়া শুরু করেছিল, সেখানেই।
ব্যাগটা আমি প্রথম নিয়ে যাই নরেন্দ্রপুরে যাবার সময় - প্রথম বাড়ি থেকে বাইরে যাত্রা, ঠিক বুঝতে পারিনি সেই যাত্রা অগস্ত্যযাত্রায় বদলে যাবে ভাগ্যের যাঁতাকলে পড়ে। সেইসময় এই ব্যাগ টাতে ছিল কিছু হাঙ্গার, রঙবেরঙের আর একটা স্টিল এর গ্লাস। আমাদের গ্লাস ও থালায় রেজিস্ট্রেশান নম্বর খোদানো থাকত, জাতে একজনের জিনিশ অন্যজনের কাছে ছলে গেলেও তা ফেরত পাওয়া যায়; মহৎ উদ্দেশ্যের বেশিরভাগ উদ্যোগের মতই এটাও বিশেষ কাজ দিত না, তবে তা এক অন্য গল্প।
আমি যখন অন্য "বোর্ড" এর পড়ার চাপ এ হাঁসফাঁস করছি, আমার সেই কখানা হাঙ্গার আমার কাপড়ের বিপুল ভারে হাঁসফাঁস করতে লাগল এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাজে ইস্তফা দিল। গেলাসখানাও খওয়া গেলো। আমার যদিও জল খাওয়ার কোনদিন অসুবিধে হয়নি, নরেন্দ্রপুর সৌহার্দের মুক্তপ্রাঙ্গন ছিল- হাত বাড়ালেই পাওয়া যেত যা চাই, তাই গ্লাস আমার ছিল, শুধু সেটা আমার "কয়েদি" নম্বর এর নয়, অন্য কোনও সেল এর অন্য কোনও আসামীর। কিন্তু বস্তুর মূল্য তার ব্যাবহারে, যে জল আমি খাচ্ছি, সে জল ঠাকুর ও খেতেন। অতএব দিন কাটতে লাগল। নরেন্দ্রপুরের শেষের দিকে যখন মাধ্যমিক পাস করে বাড়ি আসব দেখা গেলো থেসিউস এর জাহাজের মত আমার সব খোলনলচে পালটে গেছে, যদিও বাইরের আমি তা এক আছে- পড়ে জেনেছিলুম ওটাকে "বড়ো হওয়া" বলে। একটা জিনিস কিন্তু পাল্টায়নি, বা বলা ভাল, হারায়নি - আমার চটের ব্যাগটা।
যখন বাড়ি ছলে আসছি, সেই ব্যাগ এ আমার দেওয়া কয়েকটা পরীক্ষার সার্টিফিকেট আর একটা কেমিস্ট্রির টেক্সট বই ছিল।
এরপরের দুই বছর একইসাথে আমার জীবনের উত্থান ও পতনের কারন। অবাধ স্বাধীনতার ঢেউ এ ভাসতে লাগলাম। নেশা না করেই আশপাশের সব কিছু রঙ্গিন লাগতে আরম্ভ করল। জীবনে সুখ দুঃখ ব্যাথা বেদনা পাওয়ার অনেক রাস্তা আমার জানা ছিল, এই অত বর একখান প্রকাণ্ড রাজপথ যে আমার বাকি ছিল ঘোরা তা জানতুম না; তাও ঘোরা হয়ে গেলো- প্রেম এ পড়লুম, আবার উঠেও পড়লুম সেখান থেকে, তবে সেসব আজ থাক। গল্প হল এইসব করতে গিয়ে সমাজসচেতন একমাত্র যে জীবিকা বাঙ্গালির মনে গাঁথা, সেই ডাক্তারি আমার আর করা হল না। পরীক্ষায় ভরাডুবি। অতঃপর অধিক স্বাধীনতা উপভোগের দায়ে আমার নির্বাসন হল।
জলের মাছ জলে ফিরে এলুম। এই দু বছর সময়ের ঝরে তাল দিতে গিয়ে আমার সতের বছরের একনিষ্ঠ সঙ্গীটিকে ভুলেই গেছিলুম- মানুষ যেমন বেইমান হয় আরকি, কিন্তু দেখলুম সে আমাকে ভোলেনি।
বিদ্যামান্দিরে যাবার সময় ও সেই ব্যাগ দেখতে পেলুম; মনে মনে হাসলাম, ব্যাগ ও হাসল বোধয়। তাতে ছিল একটা ছাতা, আর একটা মাইক্রোবায়োলজির বই। বিদ্যামান্দির আমার জীবনের ফুটবল টাকে এক শট মেরে আবার অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলে। কত অজানা জানলুম, মনের মত দু তিনটে বন্ধু জুটে গেলো। বেশ ভাল কাটতে লাগল সময় টা। তাও ৩ বছর দেখতে দেখতেই কেটে গেলো। ভিতরে থাকতেই পরের ঠিকানা জেনে গেছিলুম- বাঙ্গালর।
অশ্বার সময় কোনও কিছু ভেবে আমি ব্যাগ গছাইনি, কিন্তু চটের ব্যাগটা সুধু এখনো হারাইনি বা ছিরে যায়নি দেখে অবাক হয়েছিলুম। ব্রিধহ বয়েসে সেটা ধুঁকছে, কিন্তু বেছে আছে। বেশি কিছু নিলে ছিঁড়ে পড়তে পারে এই ভেব কয়েকটা বই ঢুকিয়ে নিয়েছিলুম। পড়ে বের করতে গিয়ে দেখই জুজুতসানন্দের একটা উপনিষদ, একটা গীতা, আর দস্তভস্কীর "নোট্স ফ্রম থে আন্ডারগ্রউন্ড" বইটা ছিল। বড় অদ্ভুত লেগেছিল, আমার যবনের ফুটবল ম্যাচের সে যেন ধারাভাষ্যকার, খুব ঘুরিয়ে কথা বলে, তনে কাটে, কিন্তু তার বিবরনের যুক্তি বড় ধারাল, বড় অকাট্য।
বাঙ্গালরে আশার সময় ব্যাগটাকে আর নিয়ে আসিনি, ওটা যেরকম ভাবে আমার জীবন টাকে দেখছিল, কিছুটা অস্বস্তি হছহিল বোধয়, কোথাও, আমার অবচেতনের কোনও এক স্তরে। তাই ওটা অখন যেখান থেকে আমার সঙ্গ নেওয়া শুরু করেছিল, সেখানেই।
No comments:
Post a Comment